পুরান চাল ভাতে বাড়ে, রিয়াদ পুরান চার, বিসিবি হয়তো ভূলে গেছে

প্রথম প্রকাশঃ নভেম্বর ২, ২০২২ সময়ঃ ১১:১৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১১:২৬ অপরাহ্ণ

জহির ভূইয়া

বিসিবি তথা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বড় কর্তাদের কাছে ৫ পান্ডব কখনই পছন্দের তালিকায় ছিলেন না। এর কারণ কি? এটা সবাই জানে। এর কারণ ৫ পান্ডবের কারণে দলে বিসিবি কর্তা বাবুদের নিয়ন্ত্রণ-টা ঠিক মতো হচ্ছিল না। মাশরাফি অবসরের পর তামিম ইকবাল খান অভিমানে টি২০ থেকে অবসরে গেলেন। বাকী ছিল মুশফিক আর রিয়াদ। মুশফিক টি২০ ম্যাচের জন্য হয়তো বা ব্যাট হাতে ফিট নন। কিন্তু রিয়াদ? তাঁকে নিয়ে তো কোন শক্রও তর্ক করবে না।

অপেক্ষায় ছিল বিসিবি। মুশফিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামের উইকেটে টেস্ট চলা কালে এ বছেরের মাঝামাঝি প্রকাশ্যেই অনেক কথা বলেছেন। তাঁর স্ত্রী ফেসবুৃকে বলেছেন ‘একজন মৃুশফিক তৈরি করে তারপর বাদ দেবার কথা চিন্তা করুন।’ এই তো কিছু দিন আগেই আচমকা টি২০ দল থেকে মুশফিক অসবরের ঘোষণাে দিয়ে বসলেন। পথ অনেকটাই পরিস্কার বিসিবি, এবার দৃষ্টি পড়ল রিয়াদের ব্যাটে রান নেই, তার উপর।

রানে নেই রিয়াদ, তাইকে টি২০ দলে রাখা হলো না। ফর্মের দোহাই দিয়ে রিয়াদকে বাদ দেয়া হলো। পুরো বাংলাদেশ ক্রিকেটাঙ্গনে সমালোচনার ঝড় বয়ে গেল। তাতে বিসিবির অবশ্য কোন সমস্যা হয়নি। নির্বাচকরা ব্যাখা দিলেন, মিডল অর্ডারে রিয়াদ রানে নেই। বিশ্বকাপে ফর্ম জরুরী।

১২১ টি২০ ম্যাচে ২১২২ রানে ৬ ফিফটি ও বল হাতে ৩৮টি উইকেট শিকারী রিয়াদ বাংলাদেশকে বহু ম্যাচে ৬-৭ নম্বরে ব্যাট করে জয়ের স্বাদ এনে দিয়েছে। কিন্তু রিয়াদকে বাদ দেবার আগে বিসিবির বসরা একবারই সব দিনের কথা মনে রাখেনি।

তাই স্বাভাবিক ভাবেই টি২ বিশ্বকাপে মিডল অর্ডারে রিয়াদের চেয়ে বেশি ফর্মে থাকা ব্যাটাররা কে কয়টা ফিফটি আর সেঞ্চুরি উপহার দিয়েছেন তার অনুসন্ধান জরুরী।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের জায়গাতে ৬ নম্বরে ব্যাট করছেন ইয়াসির আলী আর সহ অধিনায়ক নুরুল হাসান। পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে হতাশা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি এই দুই ব্যাটার। সোহান টি২০ ক্যারিয়ারে ৪৫ টি২০ ম্যাচে কোন ফিফটি নেই, রান ৪৪৫ আর ইয়াসির আলী ১০ ম্যাচে কোন ফিফটি নেই, রান ৯৪! এরাই রিয়াদের বিকল্প?

এবার আসা যাক বিশ্বকাপে সোহান আর ইয়াসিরের ব্যক্তিগত স্কোর। অস্ট্রেলিয়াতে ৪ ম্যাচ শেষ হয়ে গেছে, সোহান ৪ ম্যাচ-ই খেলেছেন। ৪ ম্যাচে উইকেট কিপার হিসেবে এক ম্যাচে দলকে তার অপরাধে ৫ রান জরিমানা গুনতে হয়েছে। আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ বলে যা করলেন তাতে বাংলাদেশ তো প্রায় হরেই গিয়েছিল। স্ট্যাম্পের সামনে হাত দিয়ে বল ধরলেন! ডেলিভারি-টা ডট হলেও আম্পায়ার নো বলের ঘোষণা দিলে বাংলাদেশের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। কারণ জয় তো হয়ে গেছে! নো বলের কারণে আবারো ১ বল করতে হবে! তাতে হেরে যাবার সম্ভাবণাই ছিল বেশি। সৈকতের কল্যাণে হার হজম করতে হয়নি।

সোহান ৪ ম্যাচে রান করেছেন-১৮ বলে ১৩ রান, ৬ বলে ২ রান, ১ বলে ১ রান ও ১৪ বলে ২৫ রান! ৪ ম্যাচে রান ৪১, বল খেলেছেন ৩৯টি। আর ইয়াসির ৩ ম্যাচ খেলেছেন-৫ বলে ৩ রান, ২ বলে ১ রান আর ৩ বলে ১ রান!

এই দুই মিডল অর্ডার-ই হচ্ছে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর দৃষ্টিতে ফর্মে থাকা সেরা ব্যাটার! আজ যদি রিয়াদ টি২০ দলে থাকত, তাহলে ৪ ম্যাচে একটা বড় ইনিংস তো প্রত্যাশা করা যেত। কথায় আছে পুরান চাল ভাতে বাড়ে, কথাটা বিসিবির কর্তা বাবুদের হয়তো মনে নেই।

আজ ভারতের বিপক্ষে ৫ রানে জেতা ম্যাচ হেরে যাবার পর অধিনায়ক সাকিব অনভিজ্ঞতার কথা বিদেশী মিডিয়ার সামনে তুলে ধরলেন। টি২০ বিশ্বকাপে সব দলেই অভিজ্ঞার মুল্য আছে, ব্যতিক্রম কেবল বাংলাদেশ। বিসিবিকে মনে রাখা উচিত ছিল রিয়াদ শুধুই রিয়াদ, রিয়াদের তুলনা সোহান বা ইয়াসিরের সঙ্গে চলে না।

এর জবাবে নির্বাচকরা বলবেন, এক দিন রিয়াদও নতুন ছিল, সোহান-ইয়াসিরদের সুযোগ দিতে হবে। এর জবাবে বলব, যাদের ৯ না হয়, তাদের ৯০-তেও হয় না।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G